Site icon মেহেরপুর জিলাইভ | truth alone triumphs

মেহেরপুরে মাজরা পোকার আক্রমণে বিপাকে ধান চাষিরা

মেহেরপুরে মাজরা পোকার আক্রমণে বিপাকে ধান চাষিরা – ফসল করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে কিন্তু কাঙ্খিত ফলাফল পাচ্ছে না চাষিরা। তেলের দাম, মজুরি খরচ ও সারের দাম বাড়ায় এমনিতেই বিপাকে কৃষক। এরই মধ্যে আবার মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার আমন খেতে দেখা দিয়েছে গোড়া পচা রোগ ও মাজরাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ। বিভিন্নজনের নানা পরামর্শে প্রতিনিয়ত কীটনাশক ছিটিয়েও সুফল মিলছে না। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গোড়া পচা রোগ ছাড়াও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ থেকে ফসল রক্ষার্থে চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

মেহেরপুরে মাজরা পোকার আক্রমণে বিপাকে ধান চাষিরা

 

মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলার তিন উপজেলায় ২৬ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে এবার আমন ধানের আবাদ হয়েছে। গেল বছর আমন আবাদ হয়েছিল ২৬ হাজার ৮৩০ হেক্টর। গেল বছরের তুলনায় যা ৩০ হেক্টর বেশি।

শুধুমাত্র গাংনী উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। কিছু জমিতে ধানের শীষ চলে এসেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে গোড়া পচা রোগ দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে মাজরাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ। পোকার আক্রমণ করে ধানের ডগা কেটে দিচ্ছে এবং পাতা খেয়ে ফেলছে।

 

 

এসব গাছ বেঁচে থাকলেও শীষ বের হবে না বলে আশঙ্কা চাষিদের। ফলে এসব ধানগাছ থেকে কোনো ফলন আসবে না। কৃষকরা দফায় দফায় বালাইনাশক ব্যবহার করেও পোকা দমন করতে পারছে না। যদি আমনের পোকা ও গোড়া পচা রোগ দমন করা না যায় তাহলে আমন ধানের ফলন বিপর্যয়ে পড়বে কৃষকরা গাংনীর ভাটপাড়া গ্রামের চাষি জাকারিয়া বলেন, তার ধনচি মাঠে দেড় বিঘা জমিতে আমন ধান রয়েছে। ধানক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমণে ক্ষেত বিবর্ণ হয়ে গেছে।

পোকায় শীষ কেটে দিচ্ছে। প্রজাপতির আকৃতির এক ধরনের সাদা পোকার আক্রমণ খুব বেশি হয়েছে। এরা রাতে বের হয়। ফলে কীটনাশক স্প্রে করে লাভ হচ্ছে না। একই সঙ্গে গোড়া ও পাতা পচা রোগে ধান গাছ মরে যাচ্ছে। কৃষি অফিসারদের পরামর্শে বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো সমাধান হয়নি। এতে ফলন বিপর্যয় হবে। একই কথা জানালেন একই মাঠের ধানচাষি ইদ্রিস আলী।

কুঞ্জনগরের ধানচাষি রফিকুল ও আব্দুল আজিজ বলেন, শেখগাড়ি ও পোকামারির বিলে আমন ক্ষেত ভালো হয়েছিল। কিছু ক্ষেতে শীষ বেরিয়েছিল। হঠাৎ করে মাজরা পোকার আক্রমণ শুরু হয়। কৃষি অফিস আলোক ফাঁদ ও পারচিং পদ্ধতিতে পোকা নিধনের পরামর্শ দেয়। এ পদ্ধতি ছাড়াও বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সাহারবাটি গ্রামের কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, আমার এক বিঘা জমির আমন ধানে পচন ধরেছে। ওষুধ স্প্রে করি প্রতি সপ্তাহে তিনবার। তাতে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। ক্ষেতে ছোট প্রজাপতির মতো দেখতে এমন পোকার আক্রমণ বেড়েছে। বিষ স্প্রে করে উপকার পাচ্ছি না। এ পোকা রাতে বের হচ্ছে। আমি রাতেও কীটনাশক স্প্রে করেছি। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে না পারলে শীষ বের হওয়ার আগেই সব ধানগাছ কেটে দেবে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ধানক্ষেত থেকে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে মাজরা পোকার মথ সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। তা ছাড়া ধানের জমিতে ১০০ মিটারের মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি মরা শিষ অথবা পাঁচটি মরা শিষ পাওয়া গেলে ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি, এসিমিক্স, ফেনজেট, বেল্ট এক্সপার্টসহ বিভিন্ন কীটনাশক সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ করে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

 

তবে অনেক কৃষক কৃষি অফিসের পরামর্শ না নিয়ে কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে যেনতেন বিষ স্প্রে করে ধানের ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছেন। যেগুলোর গুণগত মান ঠিক নেই এমনকি দোকানিরা অধিক লাভের আশায় নিম্নমানের কীটনাশক ও বালাইনাশক প্রয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান করেন এই কৃষিবিদ।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, জেলার বিভিন্ন মাঠে পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও জেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছে। যার ফলে তা অনেকটাই দমন করা সম্ভব হয়েছে। তবে এবার পোকার কারণে আমন ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সেটা সমস্যা হবে না। এতে চাষীরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য চাষের মাধ্যমে তা পুষিয়ে নিতে সম্ভব হবে।

 

আরও পড়ূনঃ

Exit mobile version